সর্বশেষ আপডেট

3/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

জঙ্গি পালানোর ঘটনায় কারারক্ষীদের সহায়তার অভিযোগ। একজন কারা রক্ষির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ।

জঙ্গি পালানোর ঘটনায় কারারক্ষীদের সহায়তার অভিযোগ। একজন কারা রক্ষির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ।

গেল ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেন । ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ১৩১ নম্বর জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশাল ইউনিট। তদন্তের এক পর্যায়ে ছিনিয়ে জঙ্গি নেয়ার সমন্বয়ক হিসেবে অমিকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়। দুই কমিটিই তদন্তের এক পর্যায়ে দেখতে পান কারাগারে বসেই জঙ্গিরা মোবাইল ফোনে তাদের সহযোগীদের সঙ্গেথ যোগাযোগ রক্ষা করে চলত।

এ ঘটনার আগে গত বছরের জুলাই মাসে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন কারাগারের অধীন হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে জুম মিটিংয়ে অংশ নেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে। ওই ঘটনায় আট কারারক্ষীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, প্রায়ই কারাগারে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের পর কিছুদিন ঠিকমতো সবকিছু চললেও ধীরে ধীরে তা ফিরে যায় আগের অবস্থায়। কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রীয় ও কাশিমপুরের ৪ কারাগারে শক্তিশালী জ্যামার বসানোর পরও কীভাবে বন্দিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তা নিয়ে অনুসন্ধানে নামে নয়া শতাব্দী।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর পার্ট-১ ও ২, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও হাই সিকিউরিটি কারাগারে কয়েক বছর আগে ৮৮টি শক্তিশালী মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধকারী যন্ত্র বা জ্যামার বসানো হয়। ওই যন্ত্র দিয়ে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু মাত্র ৪ বছরের মাথায় এসব যন্ত্র্রের মধ্যে ৭০টি নষ্ট হয়ে গেছে। ১৭টি জ্যামারের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৩টি সচল রয়েছে। হাই সিকিউরিটি কারাগারে দুটি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে দুটি জ্যমার সচল রয়েছে। কিন্তু তাও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য না দিলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদফতরের বিশ্বস্ত একটি সূত্র মতে, বর্তমান কারাগার হবে সংশোধনাগার। এমন স্লোগানের কারণে কারাগার থেকে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে প্রতি দুইদিন পর পর কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। আর ওই সময়ে বন্ধ রাখা হয় জ্যামার। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু কারারক্ষী বন্দিদের অন্য মোবাইলে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। পাশাপাশি অনেক বন্দি তাদের কক্ষেই মোবাইল ফোন রাখার সুযোগ পায়। তারা হেভিওয়েট হওয়ার কারণে অনেক সময় তাদের কক্ষ তল্লাশি করার সাহস দেখায় না কারা কর্তৃপক্ষ। বিনিময়ে তারাও বাড়তি সুবিধা নিয়ে থাকেন। সম্প্রতি জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর থেকে আলাদা আলদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এর আগে ঢাকা রেঞ্জের জিআইজি প্রিজন ও কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপারকে বদলি করা হয়। তদন্তে দেখা যায় জঙ্গিরা তাদের কক্ষে নিয়মিত টিভি দেখতেন এবং মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। আদালতে হাজিরা দেয়ার আগের দিন তারা সবকিছু অন্য বন্দির কাছে বিক্রি করে আসেন। এ সময় বিষয় দুই কমিটির তদন্তেই উঠে আসে। এরপর কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিয়ে খোদ কমিটির সদস্যরাই চিন্তায় পড়ে যান। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে দেশের কারাগারগুলোয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করাসহ একাধিক সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি কারাগারগুলোর জ্যামার সার্বক্ষণিক সচল রাখার পাশাপাশি কোনো আসামিই যাতে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— কারাগারের সর্বত্র ব্যাকআপসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেই সিসি ফুটেজ ছয় মাস থেকে এক বছরের ব্যাকআপের (সংরক্ষণের) ব্যবস্থা রাখা। কারাগারগুলোর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে ব্যাকআপসহ বডি ও লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করতে হবে; যাতে কেউ ইচ্ছা করলেই অবৈধ কোনো মালামাল বা মাদকদ্রব্য নিয়ে ঢুকতে না পারে। কারাগারের স্পর্শকাতর জায়গায় যেসব কারারক্ষী বা কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় (ব্যাকগ্রাউন্ড) সরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যাচাই করতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি বা দুর্ধর্ষ বন্দির বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত চিঠিপত্রের মাধ্যমে না করে ইমেইল বা স্বীকৃত কোনো মাধ্যমে করতে হবে।

আদালতের শুনানি কার্যক্রমে দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি বা দুর্ধর্ষ বন্দির ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতি অব্যাহতি দিয়ে ভার্চুয়ালি হাজিরার ব্যবস্থা করতে হবে। আসামিদের শুনানির ক্ষেত্রে আদালত চত্বরে সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সেল গঠন করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালাতে হবে। আদালতে আসামিদের হাজির করার ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ি পরানোর সুপারিশ করেছে সরকার কর্তৃক গঠিত ওই তদন্ত কমিটি। মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া ওই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কমিটির কোনো সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কারাগারের অধিকাংশ দুর্ঘটনার সঙ্গে একশ্রেণির অসাধু কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী, কর্তব্যরত পুলিশের কিছু সদস্য জড়িত থাকেন। বন্দি আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা ওই সময় বন্দিদের মাদক, মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন অবৈধ দ্রব্য দিয়ে থাকেন। বন্দিদের নিরাপত্তাও ওই সময় শিথিল থাকে। এসব কারণেই মূলত বন্দি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কারাগারে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধীরা তাদের সহযোগীদের আগাম তথ্য পাচার করে দিয়ে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদদফতরের একটি সূত্রমতে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিয়মিতভাবে প্রিজনভ্যানে আসামিদের কোর্টে পাঠানো হয়। ওই সময় দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। তারা ওইসময় প্রিজনভ্যানে গমনকারী আসামিদের তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিজেদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে চিন্তিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এরই মধ্যে তারা কারাগারে শক্তিশালী জ্যামার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুরের তিনটি কারাগার এবং নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বসানো হবে এই জ্যামার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়নের আওতায় কারাগারভিত্তিক কম্প্রিহেনসিভ মোবাইল ফোন জ্যামার বসানোর উদ্দেশে একটি কমটি গঠন করা হয়েছে।

গত ২১ জুলাই একটি সভাও হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জ্যামারের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন নতুনভাবে প্রণয়নের জন্য অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কারাগারগুলো পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবে। এই মধ্যে দুটি কারাগার পরিদর্শন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার যে জ্যামারগুলো কারাগারগুলোতে বসানো হবে, সেগুলো অত্যাধুনিক।

এগুলো ঢাকার কারা অধিদফতর থেকে মনিটর করা হবে। স্থানীয় কারাগারেও মনিটরিং সিস্টেম থাকবে। আগে বসানো জ্যামারগুলো স্থানীয় কারাগার থেকে মনিটর করা হতো। ওই সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে সরকারিভাবে মোবাইল ফোনে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার যে নিয়ম চালু করা হয়েছে, সেটি অব্যাহত থাকবে। নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্দিরা সরকারি মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন। এই কক্ষ জ্যামারের আওতামুক্ত থাকবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ