সর্বশেষ আপডেট

3/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নারায়ণগঞ্জ কারাগারে জামদানির জাদু




প্রতিবেদকঃমোঃ আনিসুল হক 

তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাহারী জামদানি বুনে মাসে মাসে বাড়িতে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন অনেক বন্দি। এসব জামদানির চাহিদা এখন প্রচুর।

২০০৯ সালের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার এক জোড়া খুনের মামলায় ১২ বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন জামদানি কারিগর সুমন মিয়া। সেই মামলা আদালতে এখনও বিচারাধীন।

কারাগারে আসার পর তিনি জামদানি শাড়ি তৈরির কাজে সম্পৃক্ত হয়ে যান। অন্য বন্দিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলেন কারিগর হিসেবে।

কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে গিয়ে বন্দিরদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি তাদের কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধির।

সুমন মিয়া জানান, প্রতি মাসে তিনি জামদানি তৈরি করে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন।  এ আয় থেকে প্রতি মাসে বাড়িতে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাচ্ছেন।

“কাজে থাকলে মনটা ভালো লাগে। কোনো টেনশন, হতাশা কাজ করে না।”

বন্দিদের জামদানি তৈরি কাজ শিখিয়ে চার দেয়ালে আটকা এ দিনগুলো কিছুটা ভালো কাটছে বলে জানালেন সুমন।

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ জামদানির জন্য প্রসিদ্ধ। সেখানকার কারিগর সুমনের হাত ধরে কারাগারেই বোনা হচ্ছে জামদানি।

দূর-দূরান্ত থেকে এসে অনেকে এই কারাগারে ফটকের সামনের প্রদর্শনী কেন্দ্র থেকে কিনে নিচ্ছেন সেই শাড়ি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বন্দিদের হাতে তৈরি জামদানির চাহিদা প্রচুর।

“বন্দিরা জামদানি তৈরির আয় দিয়ে নিজের মামলার খরচ চালানোসহ পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারছে।”

জোড়াখুনের আসামি সুমনের কাছে জামদানি বোনা শিখেছেন আরেক হত্যা মামলার আসামি মো. হাসান।

২০১৭ সালে রূপগঞ্জ থানার এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত তিন বছর ধরে কারাগারে আছেন হাসান।

তিনি জামদানি তৈরি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ‘৮ থেকে ৯ হাজার টাকা’। সেখান থেকে পরিবারের জন্য কারাগার থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পাঠাতে পারছেন।

সোনারগাঁ থানার এক ছিনতাই মামলায় গত দেড় মাস আগে আটক হন শফিকুল ইসলাম। সুমনকে ওস্তাদ মেনে জামদানি বুননের কাজ শিখে নিয়েছেন তিনি।

শফিকুল বলেন, “প্রথম দিকে বার বার সুতা ছিঁড়ে গেছে। অনেক সময় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলতাম। হতাশা হয়ে যেতাম। সুমন আমাদেরকে উৎসাহ দিয়ে কারিগর হিসেবে তৈরি করেছেন।”

এখন জামদানি শাড়ি বুনে মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করছেন শফিকুল।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলা কারাগারে ১০টি জামদানি তাঁত আছে। জামদানি তৈরির সাথে যুক্ত আছেন ৪৫ জন কয়েদী ও হাজতি। তাদের হাতে তৈরি হচ্ছে চার হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি।

আঙ্গুল তেছি, চালতা, শাপলা ফুল, গুটি ফুল, মদন, ফুল তেরছি, পাংখি, আনারসসহ বিভিন্ন নকশার জামদানি তৈরি করছেন তারা। এসব জামদানি কারাগারের সামনে বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি হয়।

সেখানে জামদানি কিনতে আসা রোকেয়া রহমান বললেন, “কারাগারে তৈরি জামদানি নিখুঁত ও বেশ সুন্দর। এখানে শাড়ি পাওয়া যাওয়ায় রূপগঞ্জে যেতে হচ্ছে না।

কারা তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুল আলম বলেন, “আমাদের কারাগারের জামদানি শাড়ির চাহিদা প্রচুর। অনেক অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের কারাগারের সামনে নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র থেকেই সব জামদানি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।”

দেশের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘আড়ং’ এর সাথেও কারাগারের চুক্তি হয়েছে।  আড়ং বন্দিদের তৈরি জামদানি শাড়ি নেবে এবং ব্র্যান্ডিং করবে বলে জানান তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ