নারায়ণগঞ্জ কারাবন্দিরা তৈরি করছেন রপ্তানিযোগ্য পোশাক
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দিদের একটি অংশ রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকটি পোশাক কারখানা থেকে সাব কন্ট্রাক্টে নেওয়া কাজ এই কারাগারে করে দেন বন্দিরা। পরে ওই পোশাক গার্মেন্টস কারখানাগুলো সংগ্রহ করে কার্টন করাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে বিদেশে রপ্তানি করে।
এখানে টি-শার্ট তৈরির পাশাপাশি শিশুদের শীতের কাপড় আর মাস্কও তৈরি হয়।
বন্দিরা পোশাক তৈরির আয় দিয়ে নিজের মামলার খরচ চালিয়ে বাড়িতেও পাঠাতে পারেন।
কারাকর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর বন্দিদের সংশোধন ও পুনর্বাসনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ‘রিজিলিয়ান্স’ পোশাক কারখানা উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাব্বী মিঞা এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় পোশাক কারখানাটি স্থাপন করা হয়।
দেশে নিট পোশাক কারখানার অধিকাংশ অবস্থিত এই জেলায়। এই পোশাক কারখানার সঙ্গে যোগ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার। সেখানে সাব কন্ট্রাক্টে মানহা গার্মেন্টস, কটন হার্বেস গার্মেন্টস, বেজলিং গার্মেন্টস ও এইচ আর ট্রেডার্স গার্মেন্টস ও এ আর ফ্যাশন ওয়্যার কাজ করিয়ে নেয়। বর্তমানে এ আর ফ্যাশন ওয়্যার কারখানার অর্ডারের কাজ চলছে কারাগারে।
কারাগারের ভেতরে গিয়ে বন্দি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি। এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার শাহ্ রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই পর্যন্ত বন্দিরা এই কারা-গার্মেন্টসে এক লাখ ৫ হাজার ৪৪০টি টি-শার্ট, ৪০ হাজার মাস্ক, প্রায় ৫শ শিশুদের শীতের পোশাক উৎপাদন করেছেন। এসব পোশাক রপ্তানিকারী গার্মেন্টসের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আগে প্রতিদিন তিন হাজার পিছ তৈরি পোশাক উৎপাদন হলেও করোনাভাইরাস সংকটের কারণে এখন উৎপাদন করা যাচ্ছে দুই হাজার পিছ।”
এই পোশাক তৈরিতে যুক্ত কয়েকজন বন্দির সঙ্গে কথা হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।বন্দর থানার একটি হত্যা মামলায় নারায়ণ সরকারের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে বিচারিক আদালতে। উচ্চ আদালতে আপিলে মৃত্যুদণ্ড কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে আছেন। কারা-গার্মেন্টসে তিনি মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। প্রতি মাসে সেখান থেকে আয় করছেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।
নারায়ণ সরকার বলেন, কারাগারে সময় কাটতে চায় না। অলস সময়ে নানা হতাশা কাজ করে। কাজের ভেতরে থাকলে সময়গুলো কেটে যায়। কাজ করে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবার বাবা-মায়ের জন্য কিছু টাকা পাঠাতে পারেন। বন্দর থানার আরেকটি হত্যা মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ লিটন। গত ১১ বছর যাবত এই কারাগারে বন্দি আছেন। এর আগে তিনি হোসিয়ারী কারখানায় কাজ করতেন। এখন কারাগারে পোশাক উৎপাদনের দায়িত্বে আছেন।
লিটন বলেন, তাদের এখানে শুধু টি-শার্ট তৈরি হয়। গার্মেন্টস থেকে নিটওয়্যারের টি-শার্টের জন্য কাটা কাপড় এনে সেলাই করে পোশাক তৈরি করেন তারা। প্রতিদিন কারাগারের বন্দি ও কয়েদীরা এখানে তিন হাজারের বেশি টি-শার্ট উৎপাদন করেন। পরে সেই টি-শার্ট তারা গার্মেন্টসে পৌঁছে দেন।লিটন আরও জানান, সাজার মেয়াদ শেষ হলে কিংবা জামিন হলে অনেক বন্দি চলে যান। তাই প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন বন্দিদের পোশাক তৈরির কাজ শেখানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকা থেকে নিজের খরচের জন্য কিছু টাকা রেখে বাকিটা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। তার বাড়িতে মা ও বোন রয়েছেন।ফতুল্লা থানার একটি হত্যা মামলায় দুই বছর যাবত কারাগারে আছেন মো. আশাদুল। কারাগারে মেশিন অপারেটরের কাজ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে টি-শার্ট তৈরি করে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করেন। নিজের মামলার খরচের টাকা রেখে অল্প কিছু পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেন।
কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাগারের ভেতরে পাঁচ হাজার বর্গফুটের টিনশেডের তৈরি রিজিলিয়ান্স পোশাক কারখানা। এই কারখানায় ৫৬টি সুইং মেশিন রয়েছে। কয়েদী ও হাজতি দুই শিফটে সেখানে তিন শতাধিক বন্দি কাজ করেন। তারা টি-শার্ট তৈরি করেন। বন্দিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কারাগারের বন্দিদের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ পোশাক শ্রমিক।এই ব্যাপারে জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, কয়েকটি পোশাক কারখানা থেকে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ এনে বন্দিদের দিয়ে পোশাক তৈরি করা হয়। বন্দিরা মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করছেন। সেই পোশাক গার্মেন্টসের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
এই বিষয়ে বিকেএমইএ জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারাগারে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা একটি ভালো উদ্যোগ। কারাগার থেকে কাজ শিখে বাইরে বেরিয়ে এসে অপরাধে না জড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা হচ্ছে এই কাজের মাধ্যমে।বিকেএমইএ-এর নেতা আরও বলেন, দেশের অন্য কারাগারগুলোতে এই ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এতে বন্দিরা নিজেদের সংশোধন করতে পারবে।
স্থানীয় কয়েকটি পোশাক কারখানা থেকে সাব কন্ট্রাক্টে নেওয়া কাজ এই কারাগারে করে দেন বন্দিরা। পরে ওই পোশাক গার্মেন্টস কারখানাগুলো সংগ্রহ করে কার্টন করাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে বিদেশে রপ্তানি করে।
এখানে টি-শার্ট তৈরির পাশাপাশি শিশুদের শীতের কাপড় আর মাস্কও তৈরি হয়।
বন্দিরা পোশাক তৈরির আয় দিয়ে নিজের মামলার খরচ চালিয়ে বাড়িতেও পাঠাতে পারেন।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাব্বী মিঞা এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় পোশাক কারখানাটি স্থাপন করা হয়।
দেশে নিট পোশাক কারখানার অধিকাংশ অবস্থিত এই জেলায়। এই পোশাক কারখানার সঙ্গে যোগ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার। সেখানে সাব কন্ট্রাক্টে মানহা গার্মেন্টস, কটন হার্বেস গার্মেন্টস, বেজলিং গার্মেন্টস ও এইচ আর ট্রেডার্স গার্মেন্টস ও এ আর ফ্যাশন ওয়্যার কাজ করিয়ে নেয়। বর্তমানে এ আর ফ্যাশন ওয়্যার কারখানার অর্ডারের কাজ চলছে কারাগারে।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার শাহ্ রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই পর্যন্ত বন্দিরা এই কারা-গার্মেন্টসে এক লাখ ৫ হাজার ৪৪০টি টি-শার্ট, ৪০ হাজার মাস্ক, প্রায় ৫শ শিশুদের শীতের পোশাক উৎপাদন করেছেন। এসব পোশাক রপ্তানিকারী গার্মেন্টসের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আগে প্রতিদিন তিন হাজার পিছ তৈরি পোশাক উৎপাদন হলেও করোনাভাইরাস সংকটের কারণে এখন উৎপাদন করা যাচ্ছে দুই হাজার পিছ।”
বন্দর থানার একটি হত্যা মামলায় নারায়ণ সরকারের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে বিচারিক আদালতে। উচ্চ আদালতে আপিলে মৃত্যুদণ্ড কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে আছেন। কারা-গার্মেন্টসে তিনি মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। প্রতি মাসে সেখান থেকে আয় করছেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।
বন্দর থানার আরেকটি হত্যা মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ লিটন। গত ১১ বছর যাবত এই কারাগারে বন্দি আছেন। এর আগে তিনি হোসিয়ারী কারখানায় কাজ করতেন। এখন কারাগারে পোশাক উৎপাদনের দায়িত্বে আছেন।
লিটন আরও জানান, সাজার মেয়াদ শেষ হলে কিংবা জামিন হলে অনেক বন্দি চলে যান। তাই প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন বন্দিদের পোশাক তৈরির কাজ শেখানো হচ্ছে।
ফতুল্লা থানার একটি হত্যা মামলায় দুই বছর যাবত কারাগারে আছেন মো. আশাদুল। কারাগারে মেশিন অপারেটরের কাজ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে টি-শার্ট তৈরি করে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করেন। নিজের মামলার খরচের টাকা রেখে অল্প কিছু পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেন।
এই ব্যাপারে জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, কয়েকটি পোশাক কারখানা থেকে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ এনে বন্দিদের দিয়ে পোশাক তৈরি করা হয়। বন্দিরা মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করছেন। সেই পোশাক গার্মেন্টসের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
বিকেএমইএ-এর নেতা আরও বলেন, দেশের অন্য কারাগারগুলোতে এই ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এতে বন্দিরা নিজেদের সংশোধন করতে পারবে।
0 মন্তব্যসমূহ