সর্বশেষ আপডেট

3/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

‘আমদানি’ কক্ষ থেকে ছাড়া পেতে লাগে ২৫০০ টাকা /জামিননামা আটকে রেখে আসামির মুক্তি বিলম্বিত করা হয়

 

‘আমদানি’ কক্ষ থেকে ছাড়া পেতে লাগে ২৫০০ টাকা


‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের এই স্লোগান শুধু দেয়ালেই সীমাবদ্ধ। দুর্নীতি এখন এ কারাগারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। বন্দিদের নির্যাতন, সাক্ষাৎ-বাণিজ্য, সিট-বাণিজ্য, খাবার-বাণিজ্য, চিকিৎসা-বাণিজ্য এবং জামিন-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় করে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কারারক্ষীদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারার ঘটনা ঘটাছে এই জেলখানায়। প্রতিদিনের সংবাদের খোঁজ-খবরে বেরিয়ে এসেছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। তবে এই জেলখানার কর্মকর্তারা এই অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য মিথ্যা বলে মতামত দিয়েছেন।

কারাগারে প্রথম বন্দিদের যেখানে রাখা হয় তাকে ‘আমদানি কক্ষ’ বলা হয়। পরে বন্দিদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ‘বণ্টন’ করা হয়। ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করেন পুরাতন কয়েদি ও কারারক্ষীরা। ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার নামে বিক্রি হয় বন্দি, এতে গুনতে হয় মোটা টাকা। হাসপাতালে থাকতে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। অন্যান্য ভালো ওয়ার্ডে থাকতে দিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। জেল কর্মকর্তাদের অর্থ দিয়ে ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ নেন পুরোনো বন্দিরা। বর্তমানে জীবন নামে এক ম্যাট ‘আমদানি কক্ষ’ নিয়ন্ত্রণ করছেন। মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের অজুহাতে আমদানি কক্ষে আটকিয়ে রাখা হয় বন্দিদের। আবার ২৫০০ টাকা দিলেই অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ার সুযোগ মেলে। কারা কর্তৃপক্ষ ঘুষের টাকা পরিবারের কাছ থেকে বিকাশে গ্রহণ করেন। বন্দিরা অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আমদানি কক্ষেই রেখে দেওয়া হয়। এছাড়াও বন্দিদের দেওয়া হয় মানহীন খাবার। এসব নিম্নমানের খাবার সরবরাহের সঙ্গে কারারক্ষী, ডেপুটি জেলার এবং জেলার সরাসরি জড়িত।

কারাগারের নিয়ন্ত্রণে দুটি ক্যান্টিন রয়েছে। একটি কারাগারের ভেতরে, অন্যটি বাইরে। বাইরের ক্যান্টিনে কোনো মূল্য তালিকা নেই। ভেতরের ক্যান্টিনের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। দুই ক্যান্টিনেই সিগারেট, কলা, বিস্কুট, কেক আপেলসহ অন্যান্য প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। বন্দিদের পিসিতে (প্রিজনার ক্যাশ) ১ হাজার পাঠালে ২০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। অথচ রশিদে লেখা হয় ১ হাজার টাকা। ভেতরের ক্যান্টিনে ক্রয় করা মালামালের বিপরীতে মূল্য পিসি-কার্ড থেকে কর্তন করা হয়। শুধুমাত্র কর্তনকৃত মোট টাকার পরিমাণ থাকে। কোনো পণ্যের নাম লেখা থাকে না।

জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসা একাধিক বন্দি জানিয়েছেন, কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ড ইজারা দেওয়া হয়। ম্যাট, সিও ম্যাট, সিআইডি ম্যাট, পাহারাদার ও ওয়ার্ড রাইটার এসব ওয়ার্ড বরাদ্দ নিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট ইজারা মূল্য কারা কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে বাধ্য করে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কেন্দ্রীয় কারা নির্দেশনায় কারাবন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। তবে প্রতিদিনই জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। অফিস কল এবং সাক্ষাৎকালে টাকা আদায়ের সঙ্গে কারারক্ষী, প্রধান কারারক্ষী ও ডেপুটি জেলার জড়িত। পরে এই টাকা জেলার এবং জেল সুপারের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় কারাগারের সামনে জামিনপ্রাপ্ত আসামির স্বজনদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। জামিনপ্রাপ্ত আসামির স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। বন্দিরা আদালত থেকে জামিন লাভ করলেও অর্থ প্রদান না করলে জামিননামা আটকিয়ে রেখে মুক্তি বিলম্বিত করা হয়। এর জন্য সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা দিতে হয়।

অভিযোগ আছে, বন্দিদের খাবার, স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কারাগারে ভালো স্থানে থাকার ব্যবস্থা এসব কিছু চলে টাকার বিনিময়ে। টাকার বিনিময়ে সোনা চোরাকারবারি ও মাদক কারবারিরাও কারাগারে বিলাসী জীবনযাপন করে। কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। সেখানে অপরাধীদের রাখা হয় কৃত অপরাধের সাজা প্রদানের পাশাপাশি সংশোধনের উদ্দেশ্যে। সেই কারাগারেই চলছে নানা ধরনের অপরাধকর্ম।

জেলার ও ডেপুটি জেলারের নের্তৃত্বে গড়ে উঠেছে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সিন্ডিকেট। অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দির কাছে মাসে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড ভাড়া উত্তোলন করা হয়। অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বেড ভাড়ার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কারা কর্তৃপক্ষের পকেটে যায়। বাকি টাকা ম্যাট, পাহারাদার ও ওয়ার্ড রাইটারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান জানান, আদালত থেকে আসামির জামিনাদেশ পাওয়ার পরও কারা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করে থাকে। বিভিন্ন সময় দাড়ি-কমার ভুল দেখিয়ে নানা অজুুহাতে আসামিপ্রতি দুই-তিন হাজার টাকা দাবি করে। ঘুষের টাকা না দিলে মুক্তি দিতে টালবাহানা করে।

কারাগারে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার ইসমাইল হোসেন বলেন, এগুলো ভুয়া কথা। এসব অভিযোগ ঠিক নয়। তাছাড়া আমি তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নই, এ বিষয়ে জেল সুপারের সঙ্গে কথা বলেন।

জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদার প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, এসব বক্তব্য তো ফোনে দেওয়া যায় না। অফিসে আসেন তথ্য অধিকার আইনে যতটুকু সম্ভব তথ্য দেওয়া যাবে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এক সময় এসব অনিয়ম কারাগারে হতো বলে শুনেছি। তবে এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে কোনো অনিয়ম হয় না।


https://www.protidinersangbad.com/todays-newspaper/back-page/243082/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A7%A8%E0%A7%AB%E0%A7%A6%E0%A7%A6-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ