অনিয়মে ডুবে মোহনকে ছাড়তে হচ্ছে চট্টগ্রাম
অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবে গোয়েন্দা মোহন মিয়াকে ছাড়তে হচ্ছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। প্রিজন্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তথা কারা গোয়েন্দা ইউনিট থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে বরিশাল জিআইজি প্রিজন্স কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। সেখানেই সংযুক্ত থাকার পর তাঁকে সাধারণ কারারক্ষী হিসেবে জেলা কারাগারে পদায়ন করা হবে। মোহনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্তের সত্যতা পাওয়ায় শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।
প্রিজন্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে কোনো সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সর্বনিম্ন আট বছর তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। মাত্র আড়াই বছর দায়িত্ব পালনের পরই মোহনকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
মোহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কারাগারের ভেতরে ঢোকার আগে খোদ সিনিয়র জেল সুপার থেকে কনস্টেবল সবাই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বাইরে রেখে যেতেন। ভেতরে ঢোকার আগে গেটে কারারক্ষী দেহ তল্লাশি করেন। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন গোয়েন্দা মোহন মিয়া। তাঁর দাপটের কাছে এ নিয়ম ছিল তুচ্ছ! কারাগারের গেটে দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী মোহনের দেহ তল্লাশির সাহসই পেতেন না। কারাগারের সেল ও ওয়ার্ড থেকে সম্প্রতি একাধিকবার নিষিদ্ধ মোবাইল ফোন উদ্ধার, মাদক ও নগদ টাকা জব্দের ঘটনায় মোহনের দিকেই ছিল সন্দেহের তীর।
শুধু এটি নয়; কারাগারের যমুনা ও হালদা ভবন ঘেঁষেই 'জেল রোড সড়ক' থাকায় সারাদিন বন্দির স্বজনরা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। তাই যমুনা ও হালদার ওয়ার্ডগুলোতে চট্টগ্রামের বাসিন্দা আসামিদের বন্দি না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের। তবে এ সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে মোহন পছন্দের বন্দিদের যমুনা ও হালদা ভবনের লোভনীয় ওয়ার্ডগুলোতে রাখতে বাধ্য করতেন। এখানেই শেষ নয়, কারাগারের ভেতর সরকার অনুমোদিত টেলিফোন বুথের একক নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় সব সময় সক্রিয় ছিলেন তিনি। কোনো ভিআইপি বন্দিকে দেখতে তাঁর স্বজনরা কারাগারে এলে মোহন তাঁদের সঙ্গে মুহূর্তেই সখ্য গড়ে তুলতেন। ১৫ মিনিট সাক্ষাতের জায়গায় এক থেকে দুই ঘণ্টা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার অবৈধ সুযোগ করে দিতেন তিনি। এভাবে সিআইডি মোহনের হাত ধরেই চট্টগ্রাম কারাগারে ফিরে আসে 'ঘুষ' বাণিজ্য। মোহনের এ কাজের সঙ্গী এক কারা সার্জেন্ট ও চার থেকে পাঁচজন কয়েদি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন বলেন, 'কারা অধিদপ্তর থেকে তাঁকে প্রত্যাহার ও বদলির আদেশ আসার পর ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন তিনি বরিশাল জিআইজি অফিসে সংযুক্ত রয়েছেন।'
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এমরান হোসেন মিয়া বলেন, 'চট্টগ্রামে যোগ দেওয়ার পর মোহনের বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ আমার কানে আসে। সেই আলোকে ব্যবস্থাও নিই। গোয়েন্দা মোহন কঠোর পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলেন। কারাগারকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।'
সব অভিযোগ অস্বীকার করে মোহন মিয়া বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে যে অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। ঘুষের বিনিময়ে কোনো বন্দিকে সুবিধা দিইনি। আমার শক্ররা এসব মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। আমাকে যে শোকজ করা হয়েছিল তার জবাবও দিয়েছি।'
0 মন্তব্যসমূহ