ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে বন্দিদের চিকিৎসা
ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দি রয়েছেন খুলনা জেলা কারাগারে। কখনো এ সংখ্যা তিন গুণও ছাড়িয়ে যায়। তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য একজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে সে পদে কোনো চিকিৎসক নেই। শুধু একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে বন্দিদের চিকিৎসা।
কারাগার সূত্র জানায়, বর্তমানে বন্দি রয়েছেন ১ হাজার ৩৪৩ জন। যদিও কারাগারটির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জন। কোনো কোনো দিন ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দি থাকেন।
কারাগারের জনবল বিবরণী থেকে জানা গেছে, সেখানে ২৭৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাজ করার কথা। বর্তমানে কর্মরত আছেন ২৩৪ জন। অর্থাৎ ৪৪ জন লোকবলের অভাব।
কারা হাসপাতালে একটি করে সহকারী সার্জন, মহিলা ডিপ্লোমা নার্স, ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট ও ল্যাব টেকনেশিয়ানের পদ রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের সহকারী সার্জন, মহিলা ডিপ্লোমা নার্স, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট ও ল্যাব টেকনেশিয়ানের পদগুলো শূন্য। শুধু ফার্মাসিস্ট একাই সর্বক্ষণিক হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন। মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন অনুযায়ী, ফার্মাসিস্টরা রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না।
খুলনা জেলা কারাগারের হাসপাতালের অন্তবিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন বন্দি চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ছাড়া অন্তবিভাগে সর্বোচ্চ ২৫ জন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে জটিল পর্যায়ে গেলে রোগীদের খুলনা জেনারেল হাসপাতাল বা খুলনা মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে (কেএমসিএইচ) পাঠানো হয়।
কারা হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানকার চিকিৎসাসহ অন্যদের নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষমতা ওই মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন অধিদপ্তরের। দীর্ঘদিন ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে জেলা কারাগারগুলোতে সহকারী সার্জন পদে একজন চিকিৎসককে পদায়ন করা হচ্ছে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে।
খুলনা সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে কারাগারে চিকিৎসক পদায়ন করা হচ্ছে।’
সুজাত আহমেদ আরও বলেন, সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে মনিকা রানী নামে এক চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছিল। কয়েক দিন আগে তিনি বদলি হয়েছেন। এখন ওই পদটি শূন্য আছে। সেখানে অন্য চিকিৎসক পদায়নের চেষ্টা চলছে।
হাসপাতাল শাখার অন্যান্য জনবলের ব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেন, তারা শুধু সহকারী সার্জনের পদে এক চিকিৎসককে সেখানে পদায়ন করছেন। অন্যান্য জনবল দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার রফিকুল কাদের বলেন, বন্দিদের প্রাথমিক চিকিৎসা কারাগারের হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বড় কোনো অসুখ হলে পাশের জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এতে অসুবিধা হচ্ছে না। আইন অনুসারে কারাগারের চিফ মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন জেলা সিভিল সার্জন। কোনো সমস্যা হলে তো তিনি আছেন।
ভোগান্তিতে বন্দিরা
খুলনা জেলা কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে আসেন তাদের স্বজনরা। সম্প্রতি এক বন্দির স্বজন লুৎফুর রহমান বলেন, তার চাচাতো ভাই পাঁচ দিন আগে কারাগারে গেছেন। সে এলাকায় মারামারি করায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। মারধরের ফলে তার পিঠে কাটা দাগ রয়েছে, শরীরে ব্যথাও আছে। পায়ে আঘাত পাওয়ায় ঠিক মতো হাঁটতে পারছেন না। তবে কারাগারে গিয়ে সে কোনো চিকিৎসা পায়নি। তার পা ভেঙে গেছে কি না, তা পরীক্ষাও করা হয়নি।
লুৎফুর রহমান আরও বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি জানিয়েছেন দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করতে। পায়ের চিকিৎসা না করাতে পারলে তিনি নাকি খোঁড়া হয়ে যাবেন।’
কাদিরুল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ফুফা কারাগারে রয়েছেন। কয়েক দিন ধরে তার জ্বর হয়েছে। দেখা করতে গেলে জানান, জ্বর ভালো হচ্ছে না। এক সপ্তাহ ধরে ওষুধ খাচ্ছেন তবুও জ্বর নামছে না।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলার সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, সংবিধান, মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র সব স্থানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সব নাগরিককে শান্তিপূর্ণ বসবাসের নিশ্চিয়তা ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। সুতরাং কারাগারে বন্দিরা যদি সঠিক চিকিৎসা না পান তবে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ