ঝালকাঠি জেলা কারাগারে বন্দিদের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে বাণিজ্য |
ঝালকাঠি জেলা কারাগারে বন্দিদের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে বাণিজ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কারাগারের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রতিটি পণ্যে দ্বিগুণেরও বেশি রাখায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে কয়েদিদের মধ্যে। এ ছাড়া বাইরে থেকে বন্দিদের জন্য খাবার সরবরাহে বাণিজ্যের অভিযোগ তো রয়েছেই। জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন আসামি ও কয়েদিরা। কারা ক্যান্টিনের খাবার ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে ভেতরে চলছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। যার ফায়দা লুটছে সংশ্লিষ্ট একটি স্বার্থান্বেষী মহল। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে ভেতরের বন্দি ও জামিনে বেরিয়ে আসা আসামিরা জানান, জেলা কারাগারের ক্যান্টিনে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারি খাবারের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের, যা খাবার উপযোগী নয়। এ কারণেই অতিরিক্ত মূল্যে কারা ক্যান্টিনের খাবার কিনে খেতে বাধ্য করা হচ্ছে বন্দিদের। শুধু তাই নয়, স্বজনদের সঙ্গে ১৫ দিন পরপর সাক্ষাৎ ও ৭ দিন পরপর ১০ মিনিট করে ফোনে কথা বলার যে সরকারি নিয়ম, করোনার অজুহাতে তা কার্যকর হচ্ছে না। কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রতি সাক্ষাতে গুণতে হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এই বকশিশ না দিলে কোনোভাবেই মেলে না সাক্ষাতের অনুমতি। এই সব অনিয়ম-প্রশ্রয়ের অভিযোগই উঠেছে জেলার মো. আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে। বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, কারা ক্যান্টিনে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয় ১৬শ টাকা। এরপর রান্নার খরচসহ গুনতে হয় ২২শ থেকে ২৪শ টাকা। এরকম প্রতিটি পণ্য ক্রয় করতে হয় প্রচলিত বাজারমূল্যের কয়েকগুণ দাম দিয়ে। এভাবেই বন্দিদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিপুল অর্থ। এমনকি বন্দিরা জামিনে বেরিয়ে আসার সময় এসব স্লিপ তাদের কাছ থেকে রেখে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া মো. জসিম হাওলাদার, বাচ্চু, রনি, শুভসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, কারা হাসপাতালের সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ বাণিজ্য এবং জামিন হলে দ্রুত মুক্তি বাণিজ্যের নামেও বিপুল অঙ্কের অর্থ বাণিজ্য হচ্ছে। বন্দিরা এসবের কোনো প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ ও আটক রাখা হয় সেলে। এসব কিছুর কোনোটাই অজানা নেই জেলার মো. আক্তার হোসেনের, বরং সব অনিয়মে প্রশ্রয় আছে তার। যে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না। কারাগারের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলতে চলতে এখন তা পরিণত হয়েছে অলিখিত নিয়মে। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো. আক্তার হোসেন শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি যোগদানের পর এরকম কোনো ঘটনা নেই। এ সময় তাকে একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার প্রস্তাব দেন তিনি। বন্দিরা ভেতরে বসে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানাতে সাহস পায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জেলার আক্তার হোসেন। এ ব্যাপারে জেলা কারাগারের জেল সুপার মিলন চাকমা বলেন, এরকম অভিযোগ আমিও শুনেছি। আমি আমার মতো করে সতর্ক করেছি। বন্দিরাও ভয়ে হয়তো মুখ খুলছে না। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এর আগেও আমি এসব বিষয় মৌখিকভাবে শুনতে পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। |
0 মন্তব্যসমূহ